অতর্কিত আক্রমণে যে কার্স্ক দখলে নিয়ে রাশিয়াকে চমকে দিয়েছিল ইউক্রেন, কৌশলগত সুবিধা অর্জন করেছিল,
দিন শেষে তার দখল ধরে রাখতে পারলো না তারা। জোরালো হামলায় ইউক্রেনীয় সেনাদের পিছু হটিয়ে পুরো কার্স্ক পুনর্দখলে নেয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়া।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, কার্স্ক দখলের চেষ্টা চালিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যে বাজি ধরেছিল, তা পরাস্ত হয়েছে। ওই অঞ্চল বর্তমানে শতভাগ শত্রুমুক্ত।
পুতিন বলেন, কার্স্ক পুনর্দখলের মধ্য দিয়ে যুদ্ধে আরো শক্তিশালী অবস্থানে গেলো রুশ বাহিনী। এই জয় অন্যান্য রণাঙ্গনেও সেনাদের সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে। এর
মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির যেলেন্সকির নব্য-নাৎসি সরকারের পতন নিকটবর্তী হয়েছে বলে অভিমত পুতিনের।
জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে, কার্স্ক পুনর্দখলে রুশ বাহিনী যেভাবে লড়াই করেছে তার প্রশংসা করেন পুতিন। একই সাথে ওই অঞ্চলে রুশ সেনাদের কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করা উত্তর কোরিয়ার সেনাদেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
এদিন এক ভার্চুয়াল বৈঠকে পুতিনকে কার্স্ক শতভাগ শত্রুমুক্ত করার খবর দেন চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ। তিনি জানান, ইউক্রেনীয় সেনাদের
দখল থেকে কার্স্কের সর্বশেষ গ্রাম জোর্নাল মুক্ত করা হয়েছে। সীমান্তের বাইরে পালিয়ে গেছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
গত বছরের আগস্টে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কার্স্কের বিশাল অঞ্চল দখলে নেয় ইউক্রেনীয় সেনারা। এরপর
থেকেই ওই অঞ্চল পুনর্দখলে নিতে তুমুল আক্রমণ চালিয়ে
আসছে রুশ বাহিনী। আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত কার্স্কে ইউক্রেন ৭৬ হাজার পাঁচশ’র বেশি সেনা হারিয়েছে বলে জানান গেরাসিমভ।
তিনিও কার্স্কের যুদ্ধের রুশ বাহিনীর পাশে থাকার জন্য উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। তাদের অসম সাহসিকতা ও বীরত্বের প্রশংসা করেন।
মূলত গত বছরের ডিসেম্বরে একটি কৌশলগত অংশীদারীত্ব চুক্তির ভিত্তিতে কার্স্কে সেনা পাঠায় উত্তর কোরিয়া। ওই চুক্তি অনুসারে একে অপরকে সামরিক
সহায়তা করতে পারবে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য মতে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়তে কার্স্কে ১২ হাজার সেনা পাঠায় পিয়ংইয়ং। তবে মস্কো বা পিয়ংইয়ং এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে কার্স্কে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়েছে। দোনেৎস্ক প্রধানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইগর কিমাকোভস্কি জানিয়েছেন, কেবল কার্স্ক নয়, এরই মাঝে অন্যান্য রণাঙ্গনের সম্মুখভাগেও ভেঙে পড়েছে
ইউক্রেনীয় বাহিনী।বিশ্লেষকরা বলছেন, কার্স্কের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় আগামীতে যে কোনো সমঝোতা চুক্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেন যে সুবিধা পেতে পারতো, সেই সুযোগ হাতছাড়া
হয়ে গেলো। এখন রাশিয়া আরো আত্মবিশ্বাসের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সমঝোতার টেবিলে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বে ইউক্রেন।