Sunday, July 13, 2025

‘আমি ও আমার স্ত্রী দুই সন্তানকে বুকে আগলে ধরি, যেন কোনো গুলি তাদের আঘাত না করে’

আরও পড়ুন

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দখলকৃত জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে মুক্ত হওয়া যাত্রীরা ‘কেয়ামতের আলামত’ দেখার মতো বীভৎস অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন। ‘আমরা শ্বাস আটকে রেখেছিলাম, গুলির শব্দের মধ্যে জানতাম না সামনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে,‘ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন ইশাক নূর, যিনি ট্রেনটিতে ছিলেন।

তিনি ৪০০-এরও বেশি যাত্রীর একজন ছিলেন, যারা মঙ্গলবার কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের পথে ভ্রমণ করছিলেন। এ সময় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ট্রেনটিতে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। ট্রেনচালকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সামরিক সূত্র জানিয়েছে, ১৫৫ যাত্রীকে মুক্ত করা হয়েছে এবং ২৭ বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন, যদিও এ তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই সম্ভব হয়নি। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, অবশিষ্ট যাত্রীদের উদ্ধারে কয়েক শতাধিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ বাহিনী ও হেলিকপ্টারও কাজে লাগানো হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  এবার ইসরায়েলের বিমানঘাঁটিতে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

তবে বিএলএ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি জিম্মিদের উদ্ধারে কোনো চেষ্টা করা হয়, তবে এর ‘মারাত্মক পরিণতি’ হবে। উদ্ধারকৃত বেশ কয়েকজন যাত্রীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, কিছু বিদ্রোহী সম্ভবত ট্রেন থেকে নেমে গেছে এবং তারা কিছু যাত্রীকে কাছের পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে গেছে।

ট্রেনে কমপক্ষে এক’শ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলেন, এমনটাই জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।’দুর্যোগের মতো দৃশ্য, আমরা চার ঘণ্টা হেঁটে স্টেশনে পৌঁছাই’: মুহাম্মদ আশরাফ, যিনি কোয়েটা থেকে লাহোর যাচ্ছিলেন পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে, তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের মধ্যে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি যেন কেয়ামতের আলামত ছিল।’

তিনি জানান, ‘অনেকের মধ্যে ভয় এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, আমরা যারা ট্রেন থেকে বের হতে পেরেছিলাম, তারা প্রায় চার ঘণ্টা হেঁটে পরবর্তী স্টেশনে পৌঁছেছি। অনেক পুরুষ দুর্বল যাত্রীদের কাঁধে করে নিয়ে গেছে।’

আরও পড়ুনঃ  রিকশাসহ নালায় পড়ে ৬ মাস বয়সী শিশু নিখোঁজ

ইশাক নূর, যিনি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ ভ্রমণ করছিলেন, তিনি বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণ এতটাই প্রবল ছিল যে তার সন্তান আসন থেকে পড়ে যায়।

‘আমি ও আমার স্ত্রী একেকজন একটি করে সন্তানকে বুকে আগলে ধরি, যেন কোনো গুলি আসলে সেটা যেন আমাদের আঘাত করুক, সন্তানদের না,’ বলেন তিনি।
‘বিদ্রোহীদের ভাষা ছিল বেলুচি, তারা বারবার বলছিল নজর রেখো’। মুশতাক মুহাম্মদ, যিনি ট্রেনের তৃতীয় বগিতে ছিলেন, তিনি জানান, ‘এটি একটি ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ছিল, যা কখনো ভুলব না।’

‘বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে বেলুচি ভাষায় কথা বলছিলেন। তাদের নেতা বারবার বলছিলেন, ‘বিশেষ করে নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর নজর রেখো, যেন তারা আমাদের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে,’ বলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  ইলিয়াস কাঞ্চন ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’

সন্ধ্যার দিকে বিএলএ কিছু বেলুচিস্তানের বাসিন্দা, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মুক্তি দেয়, জানান ইশাক নূর। তিনি বলেন, ‘আমি যখন বললাম আমি তুরবাত শহরের বাসিন্দা, তখন তারা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে দেয়।’ তবে এখনও স্পষ্ট নয়, কতজন যাত্রী এখনো জিম্মি রয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, বাকি যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য বড় পরিসরে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

বুধবার বিবিসির সাংবাদিক কোয়েটা রেলস্টেশনে অনেক কাঠের কফিন উঠানো হচ্ছে দেখেছেন। একজন রেলওয়ে কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘এগুলো ফাঁকা এবং সম্ভাব্য হতাহতদের মরদেহ সংগ্রহের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

বিএলএ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি জিম্মিদের উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করা হয়, তবে তারা ভয়াবহ প্রতিশোধ নেবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ