Monday, July 7, 2025

নবজাতকের ভাগ্যে জোটেনি নতুন কাপড়

আরও পড়ুন

নবজাতকের ভাগ্যে জোটেনি নতুন কাপড়
ছবি- সমকাল

সফিকুল আলম, পঞ্চগড়

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬:৪৩ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৭:০১

FacebookXWhatsAppLinkedInTelegramMessengerEmailShare


+
পহেলা বৈশাখে পঞ্চগড়ের আশরাফুল-সাজেদা দম্পতির ঘর আলো করে দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু জন্মের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও নবজাতকের ভাগ্যে জোটেনি নতুন পোশাক। সংসারের অভাবের কারণে এক কেজি মিষ্টি কেনার সামর্থ্যও নেই নবজাতকের বাবা আশরাফুল ইসলামের। বেসরকারি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, পরিবার কিংবা

অন্য কেউ শুভেচ্ছাও জানায়নি তাদের। ছেঁড়া শাড়ির খণ্ডিত অংশ দিয়ে কলিজার টুকরোকে জড়িয়ে রেখেছেন হতভাগিনী মা। এ যেন রাজপুত্রের গায়ে ছেঁড়া কাপড়। এতেও খুশি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশরাফুল-সাজেদা দম্পতি। পহেলা বৈশাখ দুপুরে জেলা শহরের নিউ আদর্শ ক্লিনিকে গৃহবধূ সাজেদার কোল

আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে এই পুত্রসন্তান।
আশরাফুল-সাজেদা দম্পতির বাড়ি জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের ফুলপাড়া গ্রামে। আব্দুল্লাহ আল আনাস নামে আশরাফুল-সাজেদা দম্পতির তিন বছরের আরেকটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  টেকনাফ পুলিশ অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত আটক

দুই ভাই, তিন বোনের সংসারে আশরাফুল ইসলাম সবার ছোট। রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করে সংসার চালান তিনি। ভাই কোভিদ হাসেন একই পেশায় নিয়োজিত। কাজ পেলে দু’বেলা খাবার জোটে। আশরাফুলের বাবা অন্যের জমিতে কাজ করে এক সময় সংসার চালালেও বর্তমানে

তিনি শয্যাশায়ী। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই আশরাফুলের পরিবারের। আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেছেন। সাংসারিক অনটনে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি।

নবজাতকের মা সাজেদা বেগমের বাড়ি একই ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবাও একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। সাজেদা ছিলেন এক ভাই, দুই বোনের মধ্যে বড়। তিনি টুটিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ২০২১ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি

পারিবারিকভাবে সাজেদা-আশরাফুলের বিয়ে হয়। এরপর এক বছরের মাথায় প্রথম সন্তান আনাসের জন্ম হয়। বর্তমানে আনাসের বয়স তিন বছর। এবার বিশেষ দিনে দ্বিতীয় পুত্রসন্তানের জন্ম সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ মনে করছেন আশরাফুল-সাজেদা দম্পতি।

সাজেদা অন্তঃসত্ত্বা– এমন ধারণায় স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করান। পরে জেলা শহরে ডা. মনসুর আলমের কাছে আলট্রাসনোগ্রাম করান সাজেদা। হঠাৎ মায়ের পেটে শিশুর নড়াচড়া কমতে থাকায় তারা

আরও পড়ুনঃ  ট্রাম্পের সন্দেহ প্রকাশের দিনেই ইউক্রেনে রাশিয়ার ড্রোন হামলা!

হাসপাতালে আসেন। ১৪ এপ্রিল সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন হয় না এমন আশঙ্কায় সকালেই একটি রিকশায় শহরের বেসরকারি নিউ আদর্শ ক্লিনিকে ৯ হাজার ৫০০ টাকার চুক্তিতে ভর্তি করান।

সাজেদা বেগম জানান, পহেলা বৈশাখের কোনো অনুষ্ঠানে জীবনে কখনও যাওয়া হয়নি তাঁর। প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়েছেন। দারিদ্র্যের জন্য বাড়তি আনন্দের সুযোগও ছিল না। তবে এবার এখানে থাকায় শহরে সকালে আনন্দ শোভাযাত্রার শব্দ শুনতে পান। পঞ্চগড়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। সেখান থেকে ক্লিনিকে দূরত্ব এক কিলোমিটারের কম। ক্লিনিকটিও পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। ক্লিনিকের

বিছানায় শুয়ে বৈশাখী উৎসব এবং শোভাযাত্রার আনন্দ বুঝতে পারেন তিনি। তবে তাঁর মনে আতঙ্ক। পেটের মধ্যে নবজাতকের নড়াচড়া নেই। তিনিসহ পরিবারের লোকজন অপেক্ষা করছিলেন চিকিৎসকের জন্য। ডাক্তার মনসুর আলম এবং তৌহিদ ইসলাম পুলক ক্লিনিকে এলে তাদের তত্ত্বাবধানে অপারেশন শুরু হয়।

আরও পড়ুনঃ  হাসিনার অন্যায় আদেশ না মানা বশির, মনিরুজ্জামান ও জিল্লুরের নাম নেই

এ সময় সাজেদা বেগমের মা মেরিনা বেগম বসে কান্না করছিলেন। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অন্য স্বজনরা অপেক্ষারত ছিলেন। বেলা ১টা ২৮ মিনিটে তাদের জীবন আলোকিত করে জন্ম নেয় দ্বিতীয় পুত্রসন্তান। কেটে যায় অজানা আতঙ্ক। শিশুটির ওজন ছিল ২ কেজি ৯০০ গ্রাম। তবে অর্থাভাবে পরিবারের কোনো সদস্যের এক কেজি

মিষ্টি কেনার সামর্থ্যও ছিল না। ক্লিনিকের ৯ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধের চিন্তাই তাদের বড়। দু-একজনের কাছে ধার চেয়েও পাননি। এ জন্য অন্যভাবে টাকা খরচের কোনো সুযোগ নেই তাদের। পরিবারের অন্য সদস্যদেরও একই অবস্থা। কেউ শুভেচ্ছা জানানো তো দূরের কথা, নতুন কাপড় বা মিষ্টিমুখ করার ব্যবস্থাও দেখা যায়নি।

বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল আনাসের নামের সঙ্গে মিল রেখে আরবি একটি নাম রাখবেন বলে জানান শিশুটির মা সাজেদা। সব সংকট ছাপিয়ে বাবা-মায়ের একটাই প্রত্যাশা– শিশুটি যেন সুস্থ থাকে, মানুষের মতো মানুষ হতে পারে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ