Sunday, July 13, 2025

ইসরায়েলের কারাগারে কোন অপরাধে বন্দী ১০ হাজার ফিলিস্তিনি

আরও পড়ুন

আজ ১৭ এপ্রিল। প্রতি বছর এই দিনটিতে পালিত হয় ‘ফিলিস্তিনি বন্দী দিবস’। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ১৯৭৪ সালে বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া প্রথম ফিলিস্তিনি মাহমুদ বাকর হিজাজির স্মরণে এ দিনটি নির্ধারিত হয়েছিল।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ইসরায়েলি কারাগারে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী আছেন। মানবাধিকার সংস্থা আদ্দামির তথ্যমতে, এদের অধিকাংশই রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে বিবেচিত। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯৮ জন কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই আটক আছেন। এ ছাড়া বন্দীদের মধ্যে ৪০০ শিশু সহ আছেন অন্তত ২৭ জন নারী। এদের অনেককেই সামরিক শাসনের আওতায় গোপন প্রমাণের ভিত্তিতে বারবার ছয় মাস করে আটক রাখা হয়।

আরও পড়ুনঃ  তুমি শহীদ হও, যেন বাইতুল মুকাদ্দাস বেঁচে থাকে’

ইসরায়েলই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা শিশুদের সামরিক আদালতে বিচার করে। প্রতি বছরই তারা ১২ বছর বয়সী শিশুসহ প্রায় ৫০০–৭০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে গ্রেপ্তার করে। এদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সাধারণ অভিযোগ হলো—পাথর ছোড়া। এর জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তি আবার ২০ বছরের কারাদণ্ড!

এই শিশু বন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে আহমাদ মানাসরা। ২০১৫ সালে ১৩ বছর বয়সে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেবার তাঁর ১৫ বছর বয়সী চাচাতো ভাই হোসেন পূর্ব জেরুজালেমের একটি অবৈধ বসতির কাছে দুই ইসরায়েলিকে ছুরিকাঘাত করলে, হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর সঙ্গে থাকা মানাসরাকে নির্মমভাবে মারধর ও গাড়িচাপা দেওয়া হয়। মাথায় আঘাত ও রক্তক্ষরণে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে আটক করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  সুপ্রিম কোর্ট বারে মারামারি: তিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল চাকরিচ্যুত

তৎকালীন ইসরায়েলি আইনে কারও বয়স ১৪ বছরের নিচে তাকে সাজা দেওয়া যেত না। কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আহমাদের বয়স ১৪ হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে। তাঁকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা পরে কমিয়ে ৯ বছর ৫ মাসে আনা হয়। কারাগারে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন মানাসরা। ২০২১ সালে তাঁকে প্রথমবারের মতো একজন বাইরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখে জানান—তিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।

২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল, ৯ বছরেরও বেশি সময় কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পান মানাসরা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালানোর পর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। এরপর থেকে মাত্র ৬ মাসেই রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৫ হাজার ২৫০ থেকে প্রায় ১০ হাজার জনে পৌঁছায়।

আরও পড়ুনঃ  দুই রিসোর্টে স্বামীর সহায়তায় স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ১ হাজার ৩৯১ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাস মুক্তি দিয়েছে ৩৮ জন ইসরায়েলি বন্দীকে, যার মধ্যে ৮ জনের মরদেহ ছিল।

ফিলিস্তিনি বন্দী কমিশনের হিসাব অনুযায়ী—১৯৬৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে—যা ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। এর মানে হলো, প্রতি পাঁচজন ফিলিস্তিনির মধ্যে অন্তত একজন জীবনে কোনো না কোনো সময় কারাবরণ করেছেন।

এই ব্যাপক গ্রেপ্তার ও বন্দিত্ব শুধু দখলদারির ফল নয়, বরং এটি একটি সংগঠিত দমননীতির অংশ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। বন্দীদের ভবিষ্যৎ যেমন অনিশ্চিত, তেমনি ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার স্বপ্নও এখনো অধরা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ